তুফান চাকমা, নানিয়ারচর প্রতিনিধিঃ- গৌতম বুদ্ধের প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নানিয়ারচরের ৪নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে আর্য্য বিমুক্তি বন বিহারে দু’দিন ব্যাপী ৯ম তম শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দানের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
রবিবার (৭ নভেম্বর) অনন্যা চাকমার কণ্ঠে উদ্ভোদনী সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। অনুষ্ঠানে ত্রিশরণ সহ পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন জ্ঞান রঞ্জন চাকমা এবং প্রদান করেন বনভান্তের প্রধান শিষ্য শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির।
এইসময় অনুষ্ঠান মঞ্চে সঙ্ঘ প্রধান হিসেবে উপবিষ্ট ছিলেন, রাজবন বিহারের আবাসিক প্রদান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির।
আরও উপবিষ্ট ছিলেন,বোধিপুর বন বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জিন বোধি
মহাস্থবির, শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির, শ্রীমৎ দেবানন্দ মহাস্থবির, আর্য্য বিমুক্তি বন বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ বিনয় প্রিয় মহাস্থবির সহ বিভিন্ন বিহার থেকে আমন্ত্রিত ভিক্ষু সঙ্ঘ উপস্থিত ছিলেন।
দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে দানের মধ্য বুদ্ধ মূর্তি দান, সঙ্ঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, কঠিন চীবর দান, পিন্ডদান, কল্পতরু দান, বেইন ঘর উৎসর্গ সহ নানাবিধ দানের কার্য সম্পাদন করা হয়।
দানের পর্ব শেষে ভিক্ষু সঙ্ঘের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠ করেন এস্মি চাকমা।
বিকাল পর্বের প্লান্তি চাকমা সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমা।
আরও উপস্থিত ছিলেন, ৪নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমল কান্তি চাকমা, ৪নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জ্ঞানরঞ্জন দেওয়ান, আর্য্য বিমুক্তি বন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি রিপেন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক বিনয় চাকমা সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি রিপেন চাকমা, ৪নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমল কান্তি চাকমা। বিশেষ বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের সদস্য ইলিপন চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইলিপন চাকমা বলেন, বিশ্ব মহামারি করোনা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে। সরকারের পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে যথেষ্ট বরাদ্দ প্রদান করেছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর আন্তরিকতায় আমি নানিয়ারচরে উপজেলায় প্রায় ২কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছি।
তিনি আরো বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে উন্নয়নমূলক বিশেষ প্রকল্পের চাহিদা চাওয়া হয়েছে। আমি নানিয়ারচরের জন্য ৫টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আবেদন করেছি। এসব প্রকল্পগুলো অনুনমোদন হলে চৌধুরীছড়া ব্রিজ ও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক হতে চৌধুরীছড়া-আর্য বিমুক্তি বন বিহার হয়ে পোড়াক্যাম্প পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।
ভগবান বুদ্ধের অমৃত বাণী স্বধর্ম দেশনা প্রদান করেন শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির, বোধিপুর বন বিহারের অধ্যক্ষ জিন বোধি মহাস্থবির, বনভান্তের প্রধান শিষ্য (রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ) শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির।
বনভান্তের প্রধান শিষ্য শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবি দেশনায় বলেন, বুদ্ধের শিক্ষা অনুসরণে আমাদের সম্যক জ্ঞান লাভের চেষ্টা করতে হবে। তিনি বুদ্ধের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে জ্ঞান সাধনার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বুদ্ধের নির্দেশাবলী পালন করতে অবশ্যই আমাদের সদা সত্যবাদী হতে হবে। ভাল কিছু অর্জনের জন্য অবশ্যই প্রতিজ্ঞা থাকতে হবে।
সব শেষে তিনি কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অর্জিত পুণ্যরাশি দেশ ও জাতি তথা সারা বিশ্বের সুখ সমৃদ্ধি কামনায় বিতরণ করেন।
দিনব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবর দান উপলক্ষে দূর দূরান্ত থেকে পূণ্য সঞ্চয় করার জন্য হাজার হাজার পূণ্যার্থীর বিহারে সমাগম ঘটে ।