বিনোদন ডেক্স- নৃত্য শিল্পী লাবণ্য ঘোষ,তার বাবা কুণাল কান্তি ঘোষ ও মা নন্দিনী ঘোষ তার জন্মস্থান কলকাতা ২৫.০৫.১৯৯৯ তিনি খুব কম বয়সে দূরদর্শন এবং Ezcc তে A গ্রেডেড আর্টিস্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে। দেশে ও দেশের বাইরের প্রচুর মানুষের ভালোবাসায় তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন বলে জানান তার তৈরি নাচ অনেকের মনে এতটাই আনন্দ দিয়েছে যে তারা সেটাকে পুনর্নিবান করেছে। এভাবে অনেকের মধ্যে লাবণ্য ঘোষ শিল্পকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে, তিনি বলেন তার কাজের মাধ্যমে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে চাই। তিনি আরো বলেন অনেকবার অনেক রকম ভাবে কখনো উচ্চতা নিয়ে সমস্যা হয়েছে কখনো আমি একক ভাবে নৃত্য পরিবেশন করায় কথা শুনতে হয়েছে।
আমি জেনেছি, বুঝেছি খুব কম মানুষ তাঁর উলটো দিকের মানুষটির মন থেকে উন্নতি চান।এমনকি অনেক তথাকথিত কাছের মানুষদের কাছ থেকেও আমাকে নানান কটু কথা শুনতে হয়েছে ছোটবেলা থেকে। একসময় আমি সিদ্ধান্ত ও নিই যে আমি নাচ করব না। কিন্তু আমার বাবা মা পাশে ছিলেন বলেই আমি আবার নিজের মন কে নাচের প্রতি স্থির করতে পেরেছি। পড়াশুনা এবং নাচ আমি একসাথে করি।যখন আমার পরীক্ষার আগের দিন নাচের অনুষ্ঠান থাকত আমি মেকাপ করতে করতে পড়েছি। কোন কিছুকেই আমি অবজ্ঞা করিনি।
কিন্তু নাচ আমার কাছে সব কিছু তাই নাচ কেই জীবনে সব থেকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছি। একসময় আমাকে বলা হয়েছিল আমি নাচটা ঠিক করে করলেও Expression ঠিক মত দিতে পারি না। তারপর জেদ নিয়ে আমি সেই বিষয়ে মনোযোগ দিই, এখন সবাই আমাকে Expression queen বলে ডাকেন। এটাই আমার প্রাপ্তি। আমি জানি যত খারাপ কথা, অহেতুক নিন্দা ও হিংসা বিদ্বেষের জবাব একদিন আমি আমার কাজ দিয়েই দেবো।
আমার আনন্দের মুহূর্ত এটাই যে আমার কোরিওগ্রাফি মানুষ ভালোবেসে নিজে থেকে দেখে শিখে পরিবেশন করছে..ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশ এবং আরও অনেক দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এখন আমি নাচ শেখানো ও নৃত্য প্রদর্শনী শুরু করেছি। সকলেই সানন্দে অংশগ্রহন করছেন এটাই ভীষণ আনন্দের মন থেকে অনেক ধন্যবাদ জানাব সবার আগে। আমার কিছু নাচের ভিডিও ১ মিলিয়ন ভিউ পেরিয়েছে। সকলের এই ভালোবাসার আমি যেন মান রাখতে পারি এটাই আমার প্রার্থনা। আর আমি জীবনে এমন কিছু করে যেতে চাই যাতে আমি না থাকলেও আমার কাজটা থেকে যায়। অনেকটা পথ চলা বাকি, আশাকরি সবার আশীর্বাদ পাবো।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মা, বাবা দুজনেই আমার পাশে ছিল, আছে। যেটুকু সাফল্য পেয়েছি ওনাদের আর অবশ্যই আমার গুরুদের আশীর্বাদে। তবে আমার মা ছোটবেলায় নিজেও নাচ করতেন কিন্তু তাঁর পেশাগতভাবে কোনদিনও নাচ নিয়ে এগোনো হয়নি। মা বলে মায়ের স্বপ্ন ছিল মেয়ে হলে তাকে মা নাচ শেখাবেন। মায়ের অপূর্ণ সাধ যে আমি পূরণ করতে পারছি, এটাই আমার প্রথম বড় পাওনা। আমার যখন দু বছর বয়স তখন গড়িয়াতে আমাদের বাড়ির পাশেই একটি নাচের স্কুলে মা আমাকে নাচ শিখতে নিয়ে যান ।
কিন্তু বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় আমাদের চলে যেতে হয় ভুবনেশ্বর। সেখান থেকেই আমার ওড়িশি নাচ শেখার শুরু।আমার গুরুমা শ্রীমতী রাজশ্রী প্রহরাজের কাছে। আমার নৃত্যজীবনের ভিত্তিস্থাপন করেছেন উনিই। বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় নানা সময়ে নানা জায়গায় থেকেছি কিন্তু নাচ কখনো বন্ধ হয়নি। অবশেষে কলকাতা আসার পর আমি স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী শ্রীমতি নন্দিনী ঘোষালের কাছে দীর্ঘ ৭ বছর ওড়িশি শিখি এবং কলকাতা ও বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করি। পুরস্কার ও পাই।
বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যবিভাগে গ্রাডুয়েশন কমপ্লিট করলাম এবং গুরু শ্রীমতী পৌষালি মুখার্জির তত্ত্বাবধানে শিক্ষা গ্রহণ করছি। প্রতিটি পুরস্কারই আমার কাছে মনে রাখার মত। যেমন আমি যুগলশ্রীমল এক্সেলেনস অ্যাওয়ার্ড পাই পর পর দুবার, সংযুক্তা পাণিগ্রাহী মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, রাজ্যসঙ্গীত আকাদেমিতে পর পর দুবার দ্বিতীয় স্থান পাই আমি, এছাড়াও ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট একাডেমীর ডান্স ড্রামা মিউজিক ও ফাইন আর্টস আয়োজিত ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রামে প্রথম স্থান, ২০১৪ ত্রিধারা উৎসবে দ্বিতীয় স্থান, পঞ্চম বার্ষিকী কটক উৎসবে শ্রেষ্ঠ ওড়িশি নৃত্য শিল্পী মনোনিত হই। মুরারী স্মৃতি সংগীত সম্মিলনীতে প্রথম স্থান,সমগ্র ভারত নৃত্য প্রতিযোগিতা ২০১৪ তে ওড়িশি নৃত্যের প্রথম স্থান,ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স এর ২০১৬-১৭ দ্বিতীয় স্থান,ভারত সংস্কৃতি উৎসব ২০১৪ প্রথম স্থান,পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত একাডেমী আয়োজিত ওড়িশি নৃত্য প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পাই। এক একটি প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার আমাকে এগিয়ে দিয়েছে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।