সংবাদ বিজ্ঞপ্তিঃ দেড় বছর পর হত্যা মামলার আসামী হত্যাকারী সােহাইল আহমেদ (৪০) কে বাগেরহাট জেলা হতে ও তার সহযােগী নাহিদা আক্তার (২২) কে চট্টগ্রাম জেলার পতেঙ্গা থানা এলাকা হতে গ্রেফতার ও ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। হালিশহর থানার মামলা নং-১৮, তাং-২১/০৭/২০১০ইং, ধারা-৩০২/৩৪ দঃবিঃ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়ঃ
গত ২১/০৭/২০১০ইং তারিখ হালিশহর থানাধীন রহমানৱাগ আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাসা হতে একজন অমাহনামা নারীর লাশ পাওয়া যায়। উক্ত বিল্ডিং এর নিচ তলার ৪নং তালাবদ্ধ রুম হতে পঁচা দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে উক্ত বলার কেয়ারটেকার মােঃ নুর নবী হালিশহর থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত রুমের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে এবং রুমের রান্না ঘরের ফাঁকা জায়গায় বিছানার চাদর দিয়ে মােড়ানাে আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা একজন উলঙ্গ মহিলার মৃতদেহ গলায় লাল কালো রংয়ের পায়জামা দ্বারা পেঁচানাে অবস্থায় উদ্ধার করে। মৃতদেহের মুখমন্ডল বিকৃত অবস্থায় ছিল।
পরবর্তীতে মােঃ নুর নবী ‘উক্ত ঘটনা সংক্রান্ত লিখিত এজাহার দায়ের করলে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।
এই বাসাটি যে ভাড়া নিয়েছিল সে নিজেকে রেজাউল করিম বলে পরিচয় দেয় এবং রেজাউল করিম নামের একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের অস্পষ্ট ফটোকপি কেয়ারটেকার নুর নবীর নিকট জমা দেয়। পুলিশ তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত মূল আসামীর নাম মােঃ সােহাইল আহমেদ বলে জানতে পারে। একই সাথে পুলিশ উক্ত সােহাইল আহমেদ এর ছবি সংগ্রহ তে সক্ষম হন। পরবর্তীতে কেয়ারটেকার নুর নবী উক্ত ব্যক্তিকে তার বাসায় রেজাউল করিম নামে ভাড়ায় থাকা ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করেন।
পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ পলাতক আসামী সােহাইল এর অবস্থান শনাক্ত করতে সষ্টে হয়। তদন্তকালে প্রতীয়মান হয় যে, আসামী মােঃ সােহাইল অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির লােক। উক্ত আসামী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায়(নারায়নগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, বাগেরহাট) অবস্থান করায় তার প্রকৃত অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে বেগ পেতে হয়। পরবর্তীতে আসামীর সর্বশেষ অবস্থান বাগেরহাট জেলায় নিশ্চিত হওয়ার পর হালিশহর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব মােঃ আল মামুন
এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই(নিঃ)/ মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন এর নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বাগেরহাট জেলার মংলা থানার মিঠাখালী গ্রাম হতে আসামী সােহাইল কে শ্লেফতার করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে আসামী সােহাইল এর তথ্য মােতাবেক ঘটনায়
জড়িত তার ৩য় স্ত্রী নাহিদা আক্তার(২২) কে পতেঙ্গা থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
উভয়কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের ফলে ঘটনায় নিহত ভিকটিমের প্রকৃত পরিচয় লাকী আক্তার পিংকি আফসানা (২৫), পিতা-মােহাম্মদ হােসেন, মাতা-ভেলকিজা খাতুন, সাং-দক্ষিণ পতেঙ্গা, ডুরিয়া পাড়া, মনির বাড়ী, থানা-পতেঙ্গা, জেলা-চট্টগ্রাম জানা যায়। ভিকটিম লাকী আক্তার পিংকি আফসানা ছিলেন একজন গার্মেন্টস কর্মী।
আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে যায় যে, সােহাইল, নাহিদা ও ভিকটিম লাকী আক্তার পিংকি আফসানা চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পোষাক কারখানায় চাকুরী করত। সােহাইল আহমেদ ২০২০ সালের জানুয়ারীতে অত্র মামলার ভিকটিম লাকী আক্তার পিংকি আফসানাকে বিবাহ করে মামলার ঘটনাস্থলের বাসায় রাখে। ভিকটিম লাকী আক্তার পিংকী ছিল আসামী সােহাইল আহমেদ এর ৪র্থ স্ত্রী। তার প্রথম স্ত্রীর নাম পারভিন, দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম নাসিমা, যাকে আসামী বিয়ের পর বাগেরহাট পাঠিয়ে দেয়।
তৃতীয় স্ত্রী গ্রেফতারকৃত নাহিদা আক্তার, যাকে আসামী ২০১৬ সালে বিয়ে করে। নাহিদা পতেঙ্গা এলাকায় পৃথক একটি বাসায়
থাকত।
গত ১৬/০৭/২০২০ ইং তারিখ সােহাইল এবং লাকী ঘটনাস্থলের বর্ণিত বাসায় অবস্থানকালীন সময় অন্যত্র থাকা তার ৩য় স্ত্রী নাহিদা মাগরিব এর পৱে বাসায় আসে। সােহাইল তার স্ত্রী ভিকটিম লাকী আক্তার এর চালচলন নিয়ে প্রায়শই সন্দেহত, মা নিয়ে তাদের মাঝে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত। এর প্রেক্ষিতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী সােহাইল গভীর রাত্রে লাল
আক্তারকে ব্যাপক মারধর করে। মারধরের ফলে লাকী আক্তার অজ্ঞান হয়ে গেলে আসামী সােহাইল লাকীর পরিধেয় কাপড় চোপড় খুলে গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং মৃতদেহটি বিছানার চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে রান্না ঘরে রাখে। ঘটনাটি নাহিদা প্রত্যক্ষ করলেও সে নিশ্চূপ থাকে এবং সকাল বেলায় বাসা হতে বের হয়ে আত্মগােপনে চলে যায়। অপর দিকে আসামী সােহাইল তার মােৰাইল ফোন বন্ধ করে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে বিভিন্ন স্থান ঘুরে বাগেরহাটে তার ২য় স্ত্রী নাছিমার বাড়ীতে লুকিয়ে থাকে। যেহেতু ভিকটিম লাকী আক্তার এর পরিচয় শুধুমাত্র আসামী সােহাইল এবং নাহিদা জানত, সেহেতু তারা আত্মগােপনে থাকায় ও লাকী আক্তার এর মৃতদেহ চার দিন রুমে থাকার কারনে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় ভিকটিমের পরিচয় ঐ সময়ে উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
হালিশহর থানা পুলিশের নিরলস পরিশ্রম ও নিবিড় তদন্তের ফলে প্রকৃত আসামী শনাক্ত ও গ্রেফতার এবং ভিকটিমের পরিচয় শনাক্ত এই ক্লূলেস মামলাটির রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডবলমুরিং জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ আরিফ হোসেন গণমাধ্যম কে বলেন,মূলত পারিবারিক কলহের জের ধরে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। আসামি খুব ধূর্ত প্রকৃতির, সে হত্যাকাণ্ড সংগঠনের পর বিভিন্ন সময়ে তার অবস্থান বদলায়। সে নিজের অবস্থান গোপন করার জন্য মোট ১৭ টি মোবাইল সিম ব্যবহার করে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সর্বশেষ বাগেরহাট জেলায় আমরা তার অবস্থান সনাক্ত করি। অবশেষে হালিশহর থানার একটি চৌকস দল বাগেরহাট জেলা থেকে মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করে এবং দীর্ঘ দেড় বছর পর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়।