বাকিরুল ইসলাম , জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরে মেলান্দহে উপজেলার ৫০শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে দালালের উৎপাত বেড়েই চলেছে। এ সব দালালদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা।হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, রোগীদের আশপাশে ঘুরঘুর করছেন বেশ কয়েকজন দালাল। অনেক দালাল রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। রোগীদের তারা বলছে, লাইনে দাঁড়ানোর দরকার নাই। সামনে আসেন, ডাক্তার দেখিয়ে দিচ্ছি ১০০ টাকা দিবেন।জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়েন রিনা বেগম। তিনি বলেন, মেলান্দহ সরকারি হাসপাতালে এখন দালালের উৎপাত। ডাক্তারের পাশেই দাড়িয়ে থাকে দালালের দল।তিনি আরও বলেন, রোগীদের কাছে গিয়ে তারা টাকা চায়। পরে টাকা দিলে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয় দালাল চক্র। এ কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হয়। রোগীদের তারা প্রলোভন দেখায়, এখানে অনেক ভিড়, চিকিৎসা পেতে দেরি হবে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে আক্রমণাত্মক আচরণের শিকার হতে হয় রোগী বা তাদের স্বজনদের এমন অভিযোগ ও রয়েছে।
দেখা গেছে, বর্হিবিভাগের টিকিট কাউন্টারে সিরিয়াল ধরেছেন প্রায় শতাধিক রোগী। মধ্যবয়সী এক নারী মরিয়ম বেগম বলেন, সরকারি হাসপাতালে দালাল চক্র সক্রিয়। তাদের জন্য সিরিয়াল কমে না। জটলা লেগেই থাকে এবং ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যায় না। ডাক্তার যে ওষুধ লিখে দেয় সেই ওষুধও তারা দেয় না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক চিকিৎসক জানান, জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে থাকেন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা (দালাল)। তাদের রয়েছে বিভিন্ন কোড ওয়ার্ড। উন্নত চিকিৎসার নাম করে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রকাশ্যে এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও ক্লিনিকের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে দালালচক্রের যোগসাজশও রয়েছে।হাসপাতালকে ঘিরে কয়েকজন দালাল সক্রিয়। কমিশন ভিত্তিক কাজ করা এ সব দালাল চক্রের হোতারা, উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে অশিক্ষিত নিরিহ রোগীদের বাগিয়ে বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তি ফি হতে শুরু করে রোগ নির্নয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা ফি থেকে কমিশন পান দালালরা। প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়েই বেসরকারী ক্লিনিক দালাল চক্র মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করে যাচ্ছে,প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রধান ফটকে প্রবেশের পরই ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বেসরকারি ক্লিনিকে।জমেলা বেগম বলেন, স্বপ্নচূড়া বেসরকারি ক্লিনিক মহিলা দালাল সালমা বেগমকে আমার প্রতিবন্ধী প্রত্যয়নপত্র ডাক্তারের সিল’র জন্য ৫০০ টাকা নিয়েছে।কুলিয়া ইউনিয়নে ভালুকা গ্রামের সেলিম (৩০) তার ছেলের জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রত্যয়নপত্রের ডাক্তারের সিল’র জন্য তার কাছে নেওয়া হয়েছে ৪০০ টাকা।চিকিৎসা নিতে আসা রোগী রুবিনা বলেন, সালমা বেগম আমাদের হাসপাতালের বারান্দা থেকে টেনে নিয়ে বেসরকারী ক্লিনিক থেকে কম খরচে পরীক্ষা করে দেবার কথা বলে, ৩০০০ হাজার টাকা ভাউচার হাতে ধরে দেয়, আমার সঙ্গে আসা মমেনা বেওয়াকে ১৮০০ টাকা ফাউচার হাতে ধরে দেয়, নিরুপায় হয়ে পরীক্ষা করে নিলাম।সাঈদ নামে ভুক্তভোগী বলেন, হাতে ও পায়ে মোজা পড়া বোরকা ওয়ালা মহিলা, আমার কাজ থেকে জন্ম নিবন্ধন ডাক্তারের সিল নিতে ৬০০ টাকা নিছে মেলান্দহ সরকারি হাসপাতাল থেকে।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা হাসপাতালের দেয়ালে দালাল ও প্রতারক থেকে সাবধান স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছি,হাসপাতালে সার্বক্ষণিক পুলিশ অথবা আনসার সদস্য মোতায়েন ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নিয়মিত তদারকি করা হলে দালালদের তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব হবে।