এজি কায়কোবাদ,বিশেষ প্রতিনিধিঃ পিরুজালী আকন্দপাড়া এলাকার বহুল আলোচিত মাদ্রাসা ছাত্র বিপ্লব(১৪) হত্যার দায়ে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী পাষন্ড পিতার অ বাবুল হোসেন আকন্দ (৪২) ও এমদাদুল (৩৫), দ্বয়কে ১০/০৬/২০২১ তারিখ গাজীপুর জেলার পিরুজালী এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর।
০৮/০৩/২০২১ তারিখ বিপ্লব আকন্দ মসজিদে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হলে তার মা খাদিজা আক্তার ছেলেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে পরদিন সকালে পিরুজালী বকচরপাড়ার এক চালা জমির বাঁশ ঝাড়ের পাশে ফাঁকা জায়গায় বিপ্লবের মৃত দেহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত সহ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে খাদিজা আক্তার জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশে মামলাটি তদন্তভার পিবিআই গাজীপুর জেলার উপর অর্পন করা হয়।
তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর দিক- নির্দেশনা অনুযায়ী মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক জনাব মাহমুদুল হাসান মামলাটি তদন্ত করেন।
আসামী বাবুল ১১/১২ বছর আগে তার আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জুলিয়াকে বিয়ে করে এবং পৈত্রিক ০২ কাঠা জমি বিক্রি করে টাঙ্গাইলে তার ছোট স্ত্রীর বাবার বাড়িতে ঘর তৈরী করে দেয়। জুলিয়া সেখানে বিভিন্ন ছেলেদের সাথে চলাফেরা করায় বাবুল তাকে নিয়ে পিরুজালী গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। জুলিয়া প্রায়ই বাবুলের বড় স্ত্রীকে মারধর করত। ফলে বাবুলের প্রথম স্ত্রী খাদিজার সাথে দ্বিতীয় স্ত্রী জুলিয়ার ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। মামলার ঘটনার অনুমান ০৩ মাস পূর্বে আসামী বাবুল এর সাথে দ্বিতীয় স্ত্রী জুলিয়া ঝগড়া করে তার ছোট মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি টাঙ্গাইল চলে যায় এবং মোবাইল ফোনে তার স্বামী বাবুলকে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে বলে।
তালাক না দিলে সে তার ছোট মেয়েকে খুন করে বাবুল এবং তার পরিবারের সকলকে ফঁাসিয়ে দেওয়ার হুমকী প্রদান করে। বাবুল তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কথাবার্তায় সব সময় অতিষ্ঠ থাকতো। মামলার অপর আসামী এমদাদ সম্পর্কে বাবুলের ভাগ্নী জামাই। এমদাদ এর সাথে বাবুল এর ২য় স্ত্রীর গোপন সম্পর্ক ছিল, যা এমদাদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। এই সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বাবুলের দ্বিতীয় স্ত্রী জুলিয়া এমদাদকে বিভিন্ন বুদ্ধি পরামর্শ দিত যাতে করে বাবুলে প্রথম স্ত্রীকে ঘড় ছাড়া করা যায়। ঘটনার অনুমান ১০ দিন পূর্বে জুলিয়া পিরুজালী এসে আসামী এমদাদের সাথে দেখা করে ভিকটিমকে হত্যা করার জন্য বাবুলকে রাজী করাতে বলে।
ঘটনার কয়েক দিন পূর্বে বাবুল এমদাদকে জানায় তার ছোট ছেলে ভিকটিমকে হত্যা করতে হবে এবং বাবুলকে তার কথা শুনতে বলে। পরবর্তীতে বাবুল গ্রেফতারকৃত আসামী এমদাদুল এর পরামর্শে তার ছোট ছেলে ভিকটিম বিপ্লব আকন্দকে খুন করার পরিকল্পনা করে কারন আসামী বাবুল তার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতি খুবই দুর্বল ছিল। ভিকটিম নারায়নগঞ্জ মাদ্রাসা থেকে বাসায় ছুটিতে আসার কয়েকদিন পরে ঘটনার দিন আসামী বাবুল ভিকটিমকে নিয়ে এশার নামায পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। তখন আসামী বাবুল তার ছোট স্ত্রীকে তাবিজ করার কথা বলে ভিকটিমকে প্রতিবেশী খালেকের বাসা থেকে একটি কোদাল আনার জন্য বলে। ভিকটিম এর শরীর স্থাস্থ্য ভালো থাকায় আসামী এমদাদ ভিকটিমকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেভেন আপ এর সাথে নেশা জাতীয় ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ায়।
পরবর্তীতে আসামী বাবুল তার ছেলে ভিকটিম বিপ্লব আকন্দকে নিয়ে পিরুজালী বকচরপাড়া সাকিনস্থ জনৈক সানাউল্লাহ মুন্সি এর চালা জমির বাঁশ ঝাড়ের পাশে ফঁাকা জায়গায় উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণ পর ভিকটিম ঝিমিয়ে পড়তে থাকে এবং বাড়ি যাওয়ার কথা বলে মাটিতে শুয়ে পড়ে। ঠিক তখন আসামী বাবুল তার হাতে থাকা কোদাল দিয়ে ভিকটিম বিপ্লবের গলায় কোপ দেয়। ভিকটিম লাফিয়ে উঠার চেষ্টা করলে আসামী বাবুল পুনরায় কোদাল দিয়ে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং কোদালটি পাশ্ববর্তী ঢাকাইয়ার ধানের জমিতে ফেলে বাসায় চলে যায়। পরবর্তীতে আসামী এমদাদ বাবুলের কথামত কোদালটি সেখান থেকে নিয়ে তার বাসায় লুকিয়ে রাখে।
এই বিষয়ে পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন বাদীনি তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী। আনুমানিক ১১/১২ বছর আগে আসামী বাবুল তার আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে ফুসলিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করে এবং ছোট স্ত্রীর ০২ মেয়েকে নিয়ে নিজের গ্রামে আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত। মূলত পারিবারিক কলহের জের ধরে ঘটনার দিন আসামী বাবুল কোদাল দিয়ে ভিকটিমের গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। গ্রেফতারকৃত আসামী এমদাদ এর দেখানো মতে অদ্য ১০/০৬/২০২১ তারিখ তার নিজ বাড়ী হতে হত্যাকান্ডের সময় ব্যবহৃত কোদালটি উদ্ধার করা হয়।
আসামীদ্বয়কে গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করলে তারা নিজেদেরকে ঘটনার সাথে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।