এজি কায়কোবাদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকা জেলার সাভার থানার আমিনবাজার এলাকায় তুরাগ নদী হতে ইমন রহমান(২১) এর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রাশেদুল সহ ০২ জনকে টাঙ্গাইল ও গাজীপুর হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
গত ১৬ জুলাই শনিবার বিকেলে ঢাকা জেলার সাভার আমিন বাজার কেবলার চর এলাকার তুরাগ নদীতে একটি লাশ ভাসমান অবস্থায় নৌ-পুলিশ উদ্ধার করে।
গত ০৭ জুলাই ভিকটিম ইমন রহমান (২১) রাতের খাবার খেয়ে তার মায়ের কাছ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা হতে বের হয়ে যায়। প্রথমে ঘটনাটি স্বাভাবিক মনে হলেও ইমনের বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ার কারণে পরিবারের মনে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে আনুমানিক ০৫ দিন ভিকটিম এর পরিবার সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে ইমনের কোন সন্ধান না পেয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করে। এরপর গত ১৬ জুলাই ঢাকার সাভার আমিন বাজার কেবলার চর এলাকার তুরাগ নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা নৌ-পুলিশকে খবর দেয়। উদ্ধারকৃত লাশটি কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ভিকটিম ইমন রহমান এর বলে সনাক্ত করে। উদ্ধারকৃত মরদেহ সম্পূর্ণ পচে যাওয়ায় এটি হত্যাকান্ড কিংবা দুর্ঘটনা কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে অনুমান করা সম্ভব ছিল না। তবে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমের মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করেন।
২৭ জুলাই র্যাব-১, গাজীপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে আত্মগোপনে থাকা এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী ১) রাশেদুল ইসলাম ও বিপুল চন্দ্র বর্মন (১৯) কে গ্রেফতার করে। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ০১ টি দা উদ্ধার করেছে র্যাব।
আসামী রাশেদুল ইসলাম রাসু (২২) এবং বিপুল চন্দ্র বর্মন(১৯)’কে জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো স্বীকার করে যে, ভিকটিমসহ তারা সকলে একই স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশুনা করত এবং বিগত ৫/৭ বছর যাবত তারা পরস্পরের সাথে পরিচিত। এছাড়াও আসামীদ্বয় গত ২/৩ বছর পূর্ব হতে একই সাথে মাদক ক্রয় এবং সেবনের সাথে জড়িত। তারা বন্ধু হলেও ভিকটিম ইমনের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পূর্ব হতেই বিরোধ ছিল। সম্প্রতি প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে ভিকটিম ইমন এর সাথে আটককৃত রাশেদুল ইসলাম রাসু এর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিব্রতা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে রাশেদুল ইসলাম রাসু তার অপর ৪ জন সহযোগীসহ ভিকটিম ইমনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশেদুল ইসলাম রাসু মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গত ০৭ জুলাই ২০২২ তারিখ রাত আনুমানিক ২১০০ ঘটিকায় ভিকটিম ইমন‘কে তার বাড়ীর পশ্চিম পাশে বটগাছতলায় আসতে বলে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে রাসু, বিপুলসহ অন্যান্য হত্যাকারীরা আগে থেকেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকে। এরপর রাত আনুমানিক ২১৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম ইমন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন রসুলপুর বটগাছতলায় পৌঁছামাত্রই আসামী রাশেদুল ইসলাম রাসু ভিকটিম ইমনকে তার প্রেমিকাকে গালিগালাজ করার কারন জিজ্ঞাসা করে। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে রাত আনুমানিক ২২৩০ ঘটিকায় প্রধান আসামী রাশেদুল ইসলাম রাসু’র সাথে থাকা দা দিয়ে ভিকটিম ইমন’কে কোপ দেয় এবং অন্যান্য আসামীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভিকটিম ইমন’কে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে ভিকটিম ইমন (২১) নিস্তেজ হয়ে গেলে হত্যাকারীরা ইমনের লাশ যাতে কেউ খুঁজে না পায় সে উদ্দেশ্যে তুরাগ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তুরাগ নদীতে স্রোতের কারণে লাশ সাভারের আমিন বাজারে গিয়ে ভেসে উঠে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।