রাজন মিয়া বিশেষ প্রতিনিধিঃ শেরপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তা ও শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হিজড়াদের জন্য গড়ে উঠেছে ‘স্বপ্নের ঠিাকানা’ নামে এক গুচ্ছগ্রাম।
সেই গুচ্ছগ্রামে নির্মিত হয়েছে জেলার বসবাসরত ৪০ জন হিজড়ার নামে বরাদ্দকৃত একাদিক ঘর।
আজ ৭ জুন (সোমবার) দুপুর ১২টায় সেই জনগোষ্ঠীর হাতে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেছেন শেরপুরের মান্যবর জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।
শেরপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্বে কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজাধীন আন্ধারিয়া সুতিরপাড় মহল্লায় ২ একর সরকারি খাস জমিতে নির্মিত হয়েছে এ “স্বপ্নের ঠিকানা”নামে গুচ্ছগ্রাম।
শেরপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের তথ্যসূত্রে জানা যায়,ঐ দুই একর জায়গায় ৬৯ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী হিজড়াদের জন্য থাকছে ৪০ শতক জমির ওপর একটি পুকুর, শাক-সবজি ও ফসল আবাদের জন্য রাখা হয়েছে খোলা মাঠ।
এছাড়াও প্রায় ৮ একরের বড় একটি সরকারি খাস বিল। প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত হচ্ছে একটি মাল্টিপারপাস কক্ষ। প্রতিটি ঘরের সঙ্গেই রয়েছে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের জন্য রয়েছে হাড়ি-পাতিল, ২০টি বিছানা ও চাদর।
শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা ভিক্ষাবৃত্তি চাই না। মানুষকে হয়রানি করে চাঁদাবাজি করে জীবন চালাতেও চাই না। আমরা সমাজের অন্যসব সাধারণ মানুষের মতো কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে চাই।
তিনি বলেন, এখানে যেহেতু আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে তাই এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আমরা কম্পিউটার, সেলাইসহ পার্লারের কাজ শিখে টাকা উপার্জন করতে চাই।
এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব, ফিরোজ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পেরেছি। আমরা চাই তারা যেন ভিক্ষাবৃত্তির মতো ঘৃণিত পেশা বাদ দিয়ে নিজেরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন আমাদের সমাজে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার সবার আছে। তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়ারা) তাদের বাইরের কেউ না। তারা আমাদের মতো কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য বা স্বজন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আন্তরিক হয়ে আমাদের কাজ করতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আমরা আশা করি তাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হবে।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) এটিএম জিয়াউল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুকতাদিরুল আহমেদ, শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল-মামুন, শেরপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, কামারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বারী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খবির উদ্দিনসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।