জাহেদুল ইসলামঃ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ হলেও সাংবাদিকতায় রয়েছে যতো প্রতিবন্ধকতা। কথিত স্বাধীন এই পেশায় প্রতিটি স্তর যেনো অস্পর্শী তালাবদ্ধ।
যেজন্য পারলেও কেউ লেখে না প্রকাশযোগ্য অজানা অনেকের অনেক তথ্য। হোক তা ব্যক্তি গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠান কিংবা কোন বাহিনী। এ পেশায় রাষ্ট্রীয় তথ্য আইন বলছে,অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ এর ৫ ধারা মতে যেকোনো ব্যক্তি গোপনে কোনো সংবাদ পেয়ে থাকলে সেই সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না। কোনো সংবাদপত্র যদি কোনো গোপন সংবাদ প্রকাশ করে তবে প্রতিবেদক, সম্পাদক, মুদ্রাকর এবং প্রকাশক অপরাধী হবেন। এসব কাজে সহায়তা করা অপরাধ বলে গণ্য হবে। যা একজন সংবাদকর্মীর জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা। আবার রাষ্ট্রীয় আইন ছাড়াও রয়েছে নিজেদের কর্তাব্যক্তি কিংবা নিজ কর্মস্থানের বিধি নিষেধ। তাই সহজেই কোন সংবাদ সংগ্রহের পরে-ও প্রকাশের সুযোগ থাকেনা।
কেননা একজন সংবাদকর্মী নিজের জ্ঞান বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে অতি কষ্টের পর তথ্য সংগ্রহ করে। সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে। তার এই তথ্য সংগ্রহে গিয়ে কতোটা কষ্ট এবং ঝড়ঝাপটা অতিবাহিত হয় তা সেই জানে যিনি প্রতিবেদক। যদি বলি বিস্তারিত, মাঠ পর্যায়ের একজন সংবাদকর্মী যদি কোন ব্যক্তি বা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে তখন কেউ না কেউ তার সামনে বাঁধা হয়ে আসে। কেউ হয়তো তথ্য সংগ্রহকারি ঐ সংবাদকর্মীর শ্রদ্ধাভাজন, হয়তোবা তার সমর্থিত দলীয় বড় ভাই, হয়তোবা নিজ পেশার কোন সহকর্মী অথবা উক্ত পেশাজীবি সংঘটনের হর্তাকর্তা। এমনও হতে পারে তার কর্ম প্রতিষ্ঠানের কেউ এই প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্থ, হতে পারে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত বা প্রভাবিত। অনেকে আবার লিখেনা অনিয়মের কোন কিছুই কারণ তিনিও তো তাদের আয়ত্তে।
অনেকে আবার মামলা হামলার ভয়ে। তবুও থেকে যায় নিজস্ব অনেক কারণ। যেহেতু এদেশের বেশির ভাগ সাংবাদকর্মী বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে তাই উপরি তাদের প্রধান উৎস। কেউবা আবার বিজ্ঞাপনের কমিশনে নিয়োজিত। অনেকে আবার সরকারি বেসরকারি বিজ্ঞাপনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সমঝোতা থাকার কারনে অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। তাছাড়া দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় রয়েছে সাংবাদিকদের নানা ডান বাম পন্থী সংগঠন। সাংবাদিকদের সবাই কোন না কোন সংগঠনে জড়িত।
তাই সাংগঠনিকভাবেও সৃষ্টি হয় নানা প্রতিবন্ধকতা। প্রবীণ অনেক প্রতিবাদী সংবাদকর্মীও অনেক সময় এসবের ভীড়ে অসহায় হয়ে পড়ে। নবীন প্রবীণ মিলে রয়েছে অনেক প্রতিবাদী সংবাদকর্মী এমন অসহায়ের ভীড়ে। কেউবা যদি নিজের ঝুঁকি মাথায় রেখে তবুও প্রকাশ করে অনিয়মের সংবাদ তখন উপরিসহ নানান সুবিধাভোগীদের রোষানলে পড়ে মুহূর্তেই হয়ে যায় লাল নীল হলুদ সাংবাদিক। যাদের অনেককেই অনেক সময় আইনের বেড়াজালে বন্দী করে দেওয়া হয়। যার দরুন পরিশেষে তাকেও হয়তো অনিয়ম সমর্থিত হতে হয় নতুবা পেশা ত্যাগ করতে হয়। যদিও অনেক পেশার মতো ভালো খারাপ সব মিলিয়ে এই পেশায় ও রয়েছে যোগ্য অযোগ্য অনেকে। তাই অযোগ্যদের অপকর্মে যোগ্যরাও অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অনেকে আবার জানেনা দু’কথা, লিখতে চায় ছয় পাতা।
অতি লেখায় হারিয়ে যায় আসল তথ্য রাখে না সত্যতা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য। নিজের দোষে তথ্য আইনে অপরাধী হয়ে কারাভোগ করতে হয়। একজনের এমন ধাক্কায় থমকে যায় মুলধারার অনেক সংবাদকর্মী। সহজেয় পার পেয়ে যায় অনিয়মের কর্তাব্যক্তিরা। অনেক ব্যক্তি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের কর্তাবিশেষকরা নিজেদের অনিয়ম সমর্থিত কয়েকজন পরিচিত সংবাদকর্মী পোষণ করে অন্যের জন্য প্রাচীর তৈরি করে রাখে। তাই এসবদের অনিয়ম প্রকাশে নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি হয় মনোমালিন্য যা সংবাদ জগতের আরও বেশি প্রতিবন্ধকতা।
এছাড়াও ইতিপূর্বে দেশের অনেক উচ্চমানের সাংবাদিকদের মামলা হামলার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে তাদের তুলনায় নিজেদের ক্ষুদ্র ভেবে সংবাদ প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে পিছিয়ে পড়ে।সবমিলিয়ে বলা যায় স্বাধীন সাংবাদিকতায় ও রয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা।